• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন

×

প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে অনিয়ম ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট : সরকারি জিলা স্কুলে অবৈধ লটারীর জুয়া, কঠোর ব্যবস্থার দাবি

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ২৮৬ পড়েছেন

খুলনা সরকারি জিলা স্কুলে অবৈধ লটারীর মাধ্যমে জুয়া বাণিজ্য শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকারি নীতিমালায় লটারী, হাউজি, ডাইস, ওয়ান-টেন, চরচরির মতো অন্যান্য খেলা যা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে সেগুলোতে আইনগত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজের নেতৃত্বে সিনিয়র শিক্ষক মো. শাহীন আলমসহ কতিপয় শিক্ষকের সিন্ডিকেট সরকারি আইন অমান্য করে এ লটারী বাণিজ্য শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে কূপন বিক্রয়ের মাধ্যমে স্কুলকে জুয়ার আসর বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক। এমনকি লটারীর বিষয়ে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসককে অবহিত না করেই এ অনৈতিক কাজ করছেন প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেট। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ ধরণের লটারী বাণিজ্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিযোগীতায় শীর্ষে খুলনা জিলা স্কুল। দীর্ঘদিন ধরে কোচিং বাণিজ্য, বই বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, অর্থ বাণিজ্য এবং টিফিন বাণিজ্যসহ প্রতিষ্ঠানটিতে অহরহ অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় প্রধান শিক্ষকসহ কতিপয় শিক্ষকের সিন্ডিকেট এ অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ঐতিহ্য ও সুনাম হারাচ্ছে দেড়শ বছরের প্রতিষ্ঠানটি। জিলা স্কুলের এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চিত্র নিয়ে দৈনিক দেশ সংযোগের স্টাফ রিপোর্টার মো. আমিরুল ইসলাম বাবুর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব ‘ সরকারি জিলা স্কুলে লটারীর মাধ্যমে জুয়া’।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা জিলা স্কুলদক্ষিণাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ। এ বিদ্যালয় থেকে শত শত শিক্ষার্থী দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন। বাংলাদেশে এ বিদ্যাপিঠের সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে কখনই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে লটারী পরিচালনা করা হতো না। বর্তমান প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজ গত দুই বছর যাবত ক্রীড়া প্রতিযোগীতার নামে লটারীর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন। অসহায় হয়ে পড়েছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজ ২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছেন। প্রত্যেক শ্রেণী শিক্ষককে ক্রীড়া প্রতিযোগীতাসহ লটারীর কূপন বিক্রির দায়িত্ব দেয়া হয় বলে সূত্র জানায়। প্রত্যেক শ্রেণী শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক এমনকি বাইরের মানুষের কাছেও কূপন বিক্রি করছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ও খুলনার সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, জিলা স্কুল একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানদের গুণগত শিক্ষা, আদর্শ ও নৈতিকতা শিক্ষার জন্য দিয়েছি। কূপন বিক্রি করতে শিক্ষকরা মিথ্যা প্রলোভন দিচ্ছে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে মাইকিং করে ল্যাপটপ, আইফোন সহ আকর্ষনীয় সব পুরস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তবে কূপনে কি কি পুরস্কার ও কতটি পুরস্কার দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সেই সাথে ক্রীড়া প্রতিযোগীতার বাছাই পর্ব দেখতে যাওয়া অভিভাবকদের অনেকের সাথে শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষকরা অসৌজন্যমূলক ও রূঢ় আচরণ করেন। যার ফলে সন্তানদের সামনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে লজ্জিত অভিভাবকরা। ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমন আচরণে সবাই মর্মাহত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিকট থেকে কোনভাবেই এমন আচরণ কাম্য নয় বলে মনে করেন অভিভাবকরা।

জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. শাহীন আলম জানান, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কূপন ছাপানো হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আরো কূপন ছাপানোর ব্যবস্থা করবো। তবে ল্যাপটপ, আইফোন সহ আকর্ষনীয় সব পুরস্কারের কথা বলা হলেও কূপনে কোন পুরস্কারের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফারহানা নাজ বিষয়টি জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানান, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় লটারীর কূপন বিক্রয় করা উচিত হয়নি। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। কূপনের বিক্রি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব শিক্ষার্থীদের নিকট কূপন বিক্রি করা হয়েছে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসবের আয়োজন করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের বিনোদন দেওয়ার জন্য লটারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, সরকারি জিলা স্কুলের লটারীর কূপন বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকই বিষয়টি সম্বন্ধে ভালো বলতে পারবেন। তবে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ ধরণের লটারি বিক্রি করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খুলনা সামাজিক আন্দোলনের নেতা এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের লটারী বাণিজ্যে কোনভাবেই কাম্য নয়। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় এ ধরণের অনিয়ম দুর্নীতি অহরহই হচ্ছে। বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এ নাগরিক নেতা।

খুলনা জিলা স্কুলের সভাপতি ও খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, জিলা স্কুলের কূপন বিক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কূপন বিক্রয় বন্ধ করা হবে। অবৈধ কিছু করার কোন সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের রায়ে লটারি ছাড়াও হাউজি, ডাইস, ওয়ান-টেন, চরচরির মতো অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এগুলো নিষেধ আছে। আদালত এ ধরনের খেলার অনুমতি, আয়োজন করা ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এসব খেলার ইলেকট্রনিক ও অন্য সরঞ্জামাদি জব্দ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA